ফেরেশতাসূলভ গুণাবলী ও মহান রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমত লাভের যোগ্যতা অর্জনের মাস রমজান। সূর্য ডুবলেই রমজানের শেষ দশক শুরু হবে। ২০ রমজানের পর থেকে এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত একটি বিশেষ ইবাদত রয়েছে। এই ইবাদতটির নাম ইতিকাফ।
রোজা রেখে দিনের ২৪ ঘণ্টাই মসজিদে অবস্থান ও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোকে ইতিকাফ বলা হয়। তিরমিজি শরিফে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বরাতে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) প্রতিবছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন।
তার ইন্তেকালের পরে উম্মাহাতুল মুমিনীন এ আমল অব্যাহত রাখেন। ইতিকাফের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ইতিকাফকারী সব ধরনের গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকে ও তার নামে লেখা হয় সব নেক কাজ করার সওয়াব। অর্থাৎ ইতিকাফ না করলে তার পক্ষে যেসব নেক কাজের সুযোগ ছিল, এখন সেগুলো করতে না পারলেও তাকে সওয়াব দেওয়া হবে।
রমজানের ২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগ থেকে তা শুরু করতে হয়। আর তা শেষ হয় রমজান শেষ হলে। অর্থাৎ ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে বা ৩০ তারিখ পূর্ণ হলে। মহানবী (সা.) যেহেতু প্রতিবছর রমজানের শেষ দশক ইতিকাফে অতিবাহিত করতেন এবং এক বছর তা ভঙ্গ করার কারণে পরের বছর ২০ দিন ইতেকাফ করেছিলেন, এ জন্য প্রতিটি মসজিদে ইতিকাফ করা সন্নাতে মুয়াক্কাদা ‘আলাল কিফায়াহ’।
অর্থাৎ কমপক্ষে একজন মুসল্লি ইতিকাফ করলে মহল্লার সবাই দায়মুক্ত হবে। কেউ ইতিকাফ না করলে ওই মসজিদের আওতাধীন সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। রমজানের শেষ ১০ দিন পার্থিব সব কাজকর্ম থেকে মুক্ত থেকে মসজিদে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করা এই উম্মতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
এটা দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে ও আখেরাতের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন। শুধু মসজিদে অবস্থান ও ফরজ নামাজগুলো যা প্রতিদিনের স্বাভাবিক আমল, তা করলেও ইতিকাফের হুকুম পালন হয়ে যায়।
সময় বিশ্রাম ও নিদ্রায় কাটিয়ে বাকি পুরো সময় নফল নামাজ, কোরআন মজিদ তেলাওয়াত ও জিকির-তাসবিহ পাঠে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। সাময়িক বৈরাগ্যের অনুশীলন ইতিকাফের বিশেষ তাৎপর্য। দ্বিতীয়ত রমজানের প্রথম দিন থেকে রোজা পালন করতে করতে যখন ২০টি দিন হয়ে যায়, তখন রোজা রাখা অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়। আর কোনো আমল যখন অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার প্রভাব কমতে থাকে, সে দিকে লক্ষ থাকে কম।
তাই রমজানের সিয়াম সাধনা যেন অভ্যাসগত কাজের অন্তর্ভুক্ত না হয় বরং বিশেষ গুরুত্ব ও মনোযোগের বিষয় থাকে, সে জন্য সিয়াম সাধনার মাসের শেষ দিনগুলো একান্তভাবে সিয়াম ও সালাতের জন্য বরাদ্দ রাখার একটি নিয়ম এই ইতিকাফ। ইতিকাফের তাৎপর্য আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়; পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখার ধারাবাহিকতা বান্দার মধ্যে খোদাপ্রেমের বিশেষ প্রেরণা সৃষ্টি করে।
আল্লাহতায়ালার নির্দেশ মোতাবেক নিজের দৈহিক চাহিদা ও আচরণ সংযত রাখার ফলে আধ্যাতিক উৎকর্ষ সাধনে বান্দা অনেক উন্নতি লাভ করে। নশ্বর পৃথিবীর আকর্ষণ দুর্বল হতে থাকে, পরজগতের চিন্তা প্রবল হতে থাকে, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য তার মধ্যে ব্যাকুলতা বাড়তে থাকে।
তারই অভিব্যক্তি ঘটানো হয় সংসার ও বৈষয়িক জীবন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর ঘরে নিরবচ্ছিন্ন অবস্থানের মধ্য দিয়ে। আল্লাহ তায়ালার প্রতি বান্দার অনুরাগ ও প্রেমের পরাকাষ্ঠা ঘটে বায়তুল্লাহর হজের মাধ্যমে। আর রমজান
মাসের পরেই শুরু হয় হজের মওসুম।
ইতিকাফের মাধ্যমে বায়তুল্লাহর হজের প্রস্তুতি শুরু করে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা। অতএব ইতিকাফ আল্লাহ প্রেম ও আখেরাতমুখিতার উজ্জ্বল নমুনা।